যেকোন ব্যবসা করতে গেলেই সেটাতে অনেক বেশি এক্টিভ হতে হয়। যেহেতু আমাদের দেশে মানুষজন ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি এক্টিভ থাকে তাই সেখানে ব্যবসা করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে সেভাবে অনলাইনে মেলে ধরতে না পারেন অথবা ফেসবুক বিজনেস পেজে এক্টিভ থাকতে না পারেন তাহলে কিন্তু আপনি পিছিয়ে যাবেন। অনেকেই অভিযোগ করে যে তাঁদের সার্ভিস অথবা প্রডাক্ট ভাল কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। তাঁদের বেশির ভাগেরই দেখবেন এক্টিভিটি অনেক কম বা অনেকেই জানে না যে কিভাবে এক্টিভিটি বাড়াতে হবে।
তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে কিভাবে এক্টিভিটি বাড়াবেন সেটা কয়েকটা পয়েন্টের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো-
১। নিজের পেজ থেকে প্রতিদিন ৪-৬ টা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পোষ্ট করবেন। তবে সকাল ১১-১২ টায় এবং সন্ধ্যা ৭-৮ টায় স্পেশাল পোষ্ট গুলো করবেন।
২। প্রতিটি পোষ্টে ৪ টা করে ছবি এ্যাড করবেন তবে একটি ছবি পোষ্ট করলেও সমস্যা নেই। তবে ৪ টা ছবি যদি পোষ্ট করেন তবে একটি ছবিতে আপনার নিজের ছবি অথবা যদি চান তাহলে আপনার দোকানের ছবি দিয়ে পোষ্ট করবেন।
৩। প্রডাক্ট অথবা সার্ভিসের বর্ণনা এমন ভাবে লিখবেন যেন সেখানে স্পেশাল সাইনগুলো থাকে বা বুলেট পয়েন্ট থাকে। যেকোন ক্রেতা যেন খুব স্বল্প সময়ে সেটা পড়ে ফেলতে পারে।
৪। নিজের পেজ সম্পর্কে নিজের পরিচিতদের এবং আপনাদের ফেসবুক প্রোফাইলে যারা যারা আছে তাদেরকে বলুন। একই মানুষকে প্রতিদিন বলবেন না। কিছুদিন পর পর বলবেন। এমন অনেকে আছে তারা এভাবে বললে পছন্দ করে না বা যারা একেবারেই কাস্টমার হতে পারবে না তাদেরকে বেশি বেশি না বলায় শ্রেয়।
৫। সরাসরি কখনো সেল করার জন্য বলবেন না। কারণ প্রতিটা মানুষের মানসিক অবস্থা সব সময় এক রকম থাকে না। তাই কুশলাদি বিনিময় করুন। তারপর সাইকোলজি বুঝে আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে বলুন।
৬। আপনার প্রডাক্টের রিভিউ ভাল ভাবে উপস্থাপন করুন এবং আপনার যে সব ক্রেতা আপনার কাছ থেকে প্রডাক্ট বা সার্ভিস নিয়েছে তাঁদের কাছ থেকে আপনার প্রডাক্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন এবং আরো কোন উন্নতির জায়গা আছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করুন।
৭। অন্য অনেক গ্রুপ আছে যেখানে সরাসরি নিজের পেজ থেকে পোষ্ট করে সেই পোষ্ট শেয়ার করা যায়। আবার কিছু কিছু গ্রুপে কিছু নিয়ম আছে সেগুলো মেনে পোষ্ট করা যায়। সেক্ষেত্রে আগে গ্রুপের নিয়ম জেনে নিন তারপর পোষ্ট করুন এবং অন্যদের পোষ্টে বেশি বেশি কমেন্ট করুন। তবে কখনোই আজে-বাজে কথা বলবেন না। সব সময় পজেটিভ কথা বলার চেষ্টা করুন। তাহলে আস্তে আস্তে পরিচিতি পেয়ে যাবেন। আর পরিচিতি পেয়ে গেলে কবে থেকে কিভাবে আপনার বিক্রি শুরু হবে সেটা নিজেও জানেন না।
৮। যারা আপনার প্রতিযোগী তাদেরকে খুব ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তবে তাঁদেরকে কপি করতে যাবেন না। কিন্তু ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে নিজে অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
৯। আপনি যেহেতু ব্যবসা শুরু করেছেন তার মানে আপনি হয়ত ব্যবসাটা ভালই বুঝেন। তবে আপনার ব্যবসা অন্যদের থেকে কেন আলাদা সেটা আপনাকে জানতে হবে। আর নিজের প্রডাক্ট সম্পর্কে ভাল ধারণা বা স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে সেটা হয়ত না বললেও আপনি জানবেন।
১০। মাঝে মাঝে ক্যামেরা সামনে এসে নিজের প্রডাক্ট নিয়ে কথা বলুন এবং আপনার স্পেশিলিটি বোঝাবার চেষ্টা করুন। সেক্ষত্রে ধারণ করা ভিডিও নিজের পেজে আপলোড করবেন সাথে অন্য গ্রুপে শেয়ার করার চেষ্টা করবেন। মাঝে মাঝে সময় নিয়ে ফেসবুক লাইভ করুন। সেই লাইভে নিজের প্রডাক্ট দেখাতে পারেন বা আপনার ক্রেতাদের সাথে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব বা তাঁদের মতামত জানতে পারেন।
১১। প্রযুক্তি আর ব্যবসা ভাই ভাই, তাঁদের হাতে হাত ধরে চলা চাই। প্রযুক্তির সাথে না থাকলে ব্যবসা যে হারিয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতে সেটা আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। তাই বেশি বেশি করে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্লগ বা লেখা-লেখিগুলো পড়ুন এবং জানার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন।
১২। নিজের ব্যবসা যদি ভালও হয় তাও পরিকল্পনা করা বন্ধ করে দিবেন না। নিজেকে কখনই comfort zone এ নিয়ে আটকে রাখবেন না। নতুন করে টার্গেট ঠিক করে এগিয়ে যান। আর ভাল ব্যবহার আপনাকে আকাশ-সম ভাল অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারে সেটা মাথায় রাখবেন।
১৩। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। অহংকার, রাগ ও ইগো থেকে দূরে থাকুন। কেউ অপমান করলে বা বাজে কথা বললে সেটা হজম করতে শিখুন। নিজের কাজ দিয়ে সব কিছুর উত্তর দিতে শিখুন। বিনয়ী হতে শিখুন এবং নিজের চিন্তা-ভাবনাকে সব সময় আপডেট রাখুন। একদিন না একদিন সাফল্য আসবেই।
সর্বশেষ কথা, নিজে প্রতিদিন চিন্তা করুন যে কিভাবে আরো উন্নতি করা যায় এবং তা ডকুমেন্ট করে রাখুন। প্রতি সপ্তাহে বা মাসে সেটাকে রিভিউ করুন। অল্প অল্প নিয়মতান্ত্রিক এবং বাস্তবসম্মত পরিবর্তন আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখবে।
অনলাইনে কিছু প্রডাক্ট সেল করতে চাই। কিভাবে কি করব ?
আপনি চাইলে ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলে সেখানে ফেসবুক শপ সেটআপ করে নিতে পারেন। তারপর কিভাবে অর্ডার প্রসেস করতে হবে সেই আর্টিকেল আমাদের ব্লগেই পাবেন। তাছাড়াও ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানিয়েও প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন। Social media marketing করতে পারেন organic and paid way তে। আবার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য Search Engine Optimization & Search Engine Marketing করতে পারেন। ধন্যবাদ।